ইযাফত (اِضَافَةٌ) এর পরিচয়। ইযাফত (اِضَافَةٌ) এর গঠন। ইযাফত (اِضَافَةٌ) এর প্রকার। বিস্তারিত উদাহরণ।

দুই বা ততোধিক শব্দের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন পদ্ধতি ই হলো ইযাফত (اِضَافَةٌ) । আরবি বাক্যগঠনে ইযাফত (اِضَافَةٌ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত একটি বিষয়। যা মূলত নির্দিষ্টতা, মালিকানা কিংবা সম্পর্ক বুঝিয়ে থাকে। 

◆ সংজ্ঞা

اَلْاِضَافَةُ كَلِمَةٌ تَدُلُّ عَلَي نِسْبَةِ كَلِمَةٍ اِلَي كَلِمَةٍ اخَري بِواسِطَةِ حَرْفِ الْجَرِّ لَفْظًا اَوْ مَعْنًي 

মোদ্দাকথায়, ইযাফাত এমন শব্দকে বুঝায় যা প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য হরফে জ্বারের মাধ্যমে একটি শব্দের সাথে অন্য আরেকটি শব্দের সম্পর্ক তৈরি করে। 

📌 উদাহরণ (مِثَال) 

نُوْرُ اللّه (আল্লাহর আলো)

  • এখানে, نُوْرُ  শব্দটিকে اللّه শব্দের সাথে জুড়ে দিয়ে একটি সম্পর্ক তৈরি করা হয়েছে। 
  • যা একটি শব্দের উপড় অন্য শব্দের মালিকানা  সাব্যস্ত করছে।  

◆ ইযাফত (اِضَافَةٌ) এর গঠন 

 দুটি বিষয় এর সমন্বয়ে ইযাফাত গঠিত হয়। যথা- 

১। মুযাফ (مُضَافٌ) 
  • যে শব্দকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয় তা ই মুযাফ (مُضَافٌ)। 
  • মুযাফ এর শুরুতে কখনো আলিফ লাম (اَلْ)  আর শেষে কখনো তানভীন হয় না। 
  • উদাহরণ: بَيْتُ اللّهِ (আল্লাহর ঘর) । এখানে, بَيْتُ শব্দটি মুযাফ (مُضَافٌ)। 
২। মুযাফ ইলাইহি (مُضَافٌ اِلَيْهِ)
  • দুটি ইসম (اِسْمٌ) একসাথে থাকলে প্রথমটি মারেফা (مَعْرِفَةٌ) আর দ্বিতীয়টি নাকেরা (نَكِرَةٌ) হলে, দ্বিতীয় শব্দটি হলো মুযাফ ইলাইহি (مُضَافٌ اِلَيْهِ)। 
  • মুযাফ ইলাইহি (مُضَافٌ اِلَيْهِ) এর শেষে সর্বদাই যের থাকে। 
  • উদাহরণ: بَيْتُ الْحِكْمَةِ (জ্ঞানের ঘর) । এখানে, الْحِكْمَةِ  শব্দটি মুযাফ ইলাইহি (مُضَافٌ اِلَيْهِ) যার শেষে যের দৃশ্যমান। 

◆ ইযাফত (اِضَافَةٌ) এর প্রকার 

⫸ ইযাফত (اِضَافَةٌ) দুই প্রকার। যথা– 
১। ইযাফাতে লাফযী (اِضَافَةٌ لَفْظِيَّةٌ)
  • যার মুযাফ (مُضَافٌ) সাধারণত ইসমে ফায়েল ( اِسْمٌ فَاعِلْ)  বা ইসমে মাফঊল ( اِسْمٌ مَفْعُوْلٌ) কিংবা সিফাতে মুশাব্বাহা (صِفَةٌ مُشَبَّهَةٌ ) জাতীয় শব্দ দ্বারা গঠিত হয়। 
  • উদাহরণ: مِفْتَاحُ الشَّرِّ (অকল্যানের চাবিকাঠি)।
২। ইযাফাতে মা’নাবী (اَضَافَة مَعْنَوِيَّةٌ)
  • মুযাফ (مُضَافٌ) টি যদি ইসমে জামেদ (اِسْمٌ جَامِدٌ ) হয় তখন ইযাফত টিকে ইযাফাতে মা’নাবী (اَضَافَة مَعْنَوِيَّةٌ) বলে। 
  • উদহরণ: جَوَّالُ رَشِيْدٍ (রাশেদের মোবাইল)। এখানে। প্রথম শব্দটি একটি ইসমে জামেদ (اِسْمٌ جَامِدٌ )। 
⫸ ইযাফত (اِضَافَةٌ) তিন প্রকার। যথা– 
১। ইযাফাতে লিম্মিয়্যাহ্ (اِضَافَةٌ لِمِّيَّةٌ)
  • হরফে জ্বার (لام) কে গোপন করে যে ইযাফাত গঠন করা হয়, তাকে ইযাফাতে লিম্মিয়্যাহ্ (اِضَافَةٌ لِمِّيَّةٌ) বলে। 
  • উদাহরণ: حَاسُوْبُ رَشِيْدٍ (রাশেদের কম্পিউটার)। যা মূলত ছিলো اَلْحَاسُوْبُ لِرِشَيْدٍ (কম্পিউটারটি রাশেদের জন্য)। এখানে (لام) হরফে জ্বার কে হযফ বা গোপন করা হয়েছে। 
২। ইযাফাতে মিন্নিয়্যাহ্ (اَضَافَةٌ مِنِّيَّةٌ) 
  • হরফে জ্বার (من) কে গোপন করে যে ইযাফাত গঠন করা হয়, তাকে ইযাফাতে মিন্নিয়্যাহ্ (اَضَافَةٌ مِنِّيَّةٌ)  বলে। 
  • উদাহরণ: خَاتَمُ الذَّهَبِ (স্বর্ণের আংটি)। যা মূলত ছিলো  ذَهَبٌ مِنْ خَاتَمٍ (স্বর্ণ থেকে তৈরি আংটি)। 
৩। ইযাফাতে ফিয়্যাহ্ (اَضَافَةٌ فِيَّةٌ)
  • হরফে জ্বার (في) কে গোপন করে যে ইযাফাত গঠন করা হয়, তাকে ইযাফাতে মিন্নিয়্যাহ্ (اَضَافَةٌ مِنِّيَّةٌ)  বলে। 
  • উদাহরণ: صَلَاةُ الْفَجْرِ (ফজরের সালাত)। যা মূলত ছিলো صَلَاةٌ فِي الْفَجْرِ (ফজরের সময়ের সালাত)। 

◆ শেষ কথাঃ 

খেয়াল করতে হবে মুযাফ (مُضَافٌ) ও মুযাফ ইলাইহি (مُضَافٌ اِلَيْهِ) বাক্যে দৃশ্যমান কি না? যদি না থাকে ক্রিয়া বা গুণ সদৃশ্য হলে তা ইযাফাতে লাফযী (اِضَافَةٌ لَفْظِيَّةٌ)। অন্যথায় ইযাফাতে মা’নাবী (اَضَافَة مَعْنَوِيَّةٌ) ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *